কোঁকড়ানো চুল সোজা করার ঘরোয়া উপায়
কোঁকড়ানো চুল যেমন সুন্দর, তেমনি যত্নের ক্ষেত্রে একটু ঝামেলাপূর্ণ। প্রতিদিনের আঁচড়ানো, জট খুলে ফেলা, আর ইচ্ছেমতো স্টাইল করা সবই যেন ছোটখাটো মিশন। তাই অনেকেই চান চুল যদি হতো সোজা ও মসৃণ!
সোজা চুল সাজানো সহজ, কম সময়ে প্রস্তুত হওয়া যায় আর দেখতে হয় আরও গুছানো। কিন্তু সমস্যা হলো পার্লারের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা হেয়ার স্ট্রেইটনারের হিট চুলের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নষ্ট করে দেয়। ফলে চুল ভেঙে যায়, রুক্ষ হয়ে পড়ে, এমনকি আগা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
কিন্তু সুসংবাদ হলো ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে চুল সোজা করা সম্ভব। এতে কেমিক্যালের ক্ষতি নেই বরং নারকেল দুধ, লেবু, দুধ, মধুর মতো উপাদান চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুষ্টি জোগায়।
চুল সোজা করার আগে যা জানা জরুরি
চুল সোজা করার আগে নিজের চুলের ধরন বোঝা দরকার সোজা, ঢেউ খেলানো, নাকি কোঁকড়ানো। কোঁকড়ানো চুল সহজে শুকিয়ে যায়, আর্দ্রতা হারায়, আর দ্রুত জট লেগে যায়।
-
কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের ঝুঁকি: পার্লারের রিবন্ডিং বা কেরাটিন ট্রিটমেন্টে ফরমালডিহাইডের মতো কেমিক্যাল ব্যবহার হয়, যা চুলের গঠন নষ্ট করে।
-
প্রাকৃতিক উপায়ের সুবিধা: নারকেল দুধ, অ্যালোভেরা, মধু, ডিম এসব উপাদান চুলকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে, আর্দ্রতা ধরে রাখে, এবং ধীরে ধীরে সোজা করে তোলে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল সোজা করার সুবিধা
-
কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল নেই – চুলের স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ থাকে।
-
খরচ সাশ্রয়ী – রান্নাঘরের উপাদানেই কাজ চলে যায়।
-
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব – ধীরে ধীরে চুলের গঠন উন্নত হয়।
-
অতিরিক্ত যত্ন – মাথার ত্বকও পুষ্টি পায়।
নারকেল দুধ ও লেবুর মিশ্রণ: সোজা ও ঝলমলে চুলের জন্য
কেন কাজ করে: নারকেল দুধে থাকা ফ্যাট ও প্রোটিন চুল ময়েশ্চারাইজ করে, লেবুর রস চুলকে উজ্জ্বল ও ফ্রিজ-ফ্রি করে।
উপাদান:
-
১ কাপ ঘন নারকেল দুধ
-
২ টেবিল চামচ লেবুর রস
প্রস্তুত প্রণালী:
-
নারকেল দুধ ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
-
ফ্রিজে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। উপরে জমে যাওয়া ঘন ক্রিম আলাদা করুন।
ব্যবহার:
-
ক্রিমটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান।
-
গরম তোয়ালে দিয়ে চুল জড়িয়ে ৩০–৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
-
হালকা ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ব্যবহারের নিয়ম: সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। কয়েক সপ্তাহ পরেই চুল হবে নরম, মসৃণ ও সোজা।
দুধ ও মধুর মাস্ক: নরম ও সিল্কি চুলের জন্য
কেন কাজ করে: দুধের প্রোটিন চুলের গঠন শক্তিশালী করে, আর মধু আর্দ্রতা ধরে রাখে।
উপাদান:
-
আধা কাপ কাঁচা দুধ
-
২ টেবিল চামচ খাঁটি মধু
ব্যবহার:
-
দুধ ও মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
-
চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
-
ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল হবে সিল্কি, ফ্রিজ-মুক্ত এবং ধীরে ধীরে সোজা।
চুল সোজা করার পর যত্নের টিপস
-
সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
-
অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলুন।
-
সপ্তাহে অন্তত একদিন তেল ম্যাসাজ করুন।
-
রোদে বের হলে চুল ঢেকে রাখুন।
সাধারণ ভুল যা এড়ানো উচিত
-
বারবার স্ট্রেইটনার ব্যবহার
-
অতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রোডাক্ট
-
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চুল ধোয়া
শেষ কথা
চুল সোজা করা মানেই কেমিক্যাল বা হিট নয়। ধৈর্য ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে যত্ন নিলে, আপনার চুল হবে একই সাথে সুন্দর ও সুস্থ। নারকেল দুধ, লেবু, দুধ, মধুর মতো উপাদান শুধু সোজা করবেই না, বরং চুলের আসল উজ্জ্বলতাও ফিরিয়ে আনবে।