আন অফিসিয়াল আইফোন iPhone কিনলে সুবিধা ও অসুবিধা
আন অফিসিয়াল আইফোন iPhone বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন স্মার্টফোন। আধুনিক ডিজাইন, উন্নত সিকিউরিটি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও দীর্ঘ সফটওয়্যার সাপোর্টের কারণে অনেকেই আইফোন ব্যবহার করতে চান। তবে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে আইফোন দুইভাবে বিক্রি হয় — অফিসিয়াল (Official) ও আন-অফিসিয়াল (Unofficial)। অনেকেই কম দামে পাওয়ার জন্য আন-অফিসিয়াল আইফোন কিনতে চান।
তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই দুই ধরণের পার্থক্য, এবং বিশেষ করে আন অফিসিয়াল আইফোন কিনলে কী সুবিধা ও অসুবিধা হতে পারে — তা ভালোভাবে জানা জরুরি।
আন অফিসিয়াল আইফোন কী?
আন অফিসিয়াল আইফোন হল সেই ডিভাইস যেগুলো বাংলাদেশে Apple-এর অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে আনা হয়নি। এগুলো অন্য দেশ থেকে ব্যক্তি বা রিটেইলাররা নিজের উদ্যোগে আমদানি করে বিক্রি করেন। ফলে এই ফোনে স্থানীয় ওয়ারেন্টি বা সাপোর্ট থাকে না এবং কাস্টমস ডিউটি পরিশোধও অনেক সময় করা হয় না।
অন্যদিকে অফিসিয়াল আইফোন হলো যেগুলো Apple-এর অনুমোদিত বাংলাদেশি ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে আনা হয় এবং বাংলাদেশ সরকারের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে শুল্ক পরিশোধ করে বাজারজাত করা হয়।
আন অফিসিয়াল আইফোন কেনার সুবিধা
অনেকে আন অফিসিয়াল আইফোন কেনার পেছনে মূলত কিছু সুবিধার কারণে আকৃষ্ট হন:
১. কম দাম
আন অফিসিয়াল আইফোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দাম কম হওয়া। কাস্টমস শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ না থাকায় এই ফোনগুলো অফিসিয়াল ফোনের তুলনায় কয়েক হাজার থেকে কয়েক দশ হাজার টাকা পর্যন্ত সস্তা হয়। যারা সীমিত বাজেটে আইফোন কিনতে চান তাদের জন্য এটি বড় আকর্ষণ।
২. দ্রুত নতুন মডেল পাওয়া
অনেক সময় বাজারে নতুন মডেল আসার পর অফিসিয়াল চ্যানেলে আসতে কিছুটা সময় লাগে। কিন্তু আন অফিসিয়াল চ্যানেলে নতুন মডেল খুব দ্রুত পাওয়া যায়। যারা নতুন মডেল পেতে আগ্রহী, তারা এই পথে দ্রুত পেতে পারেন।
৩. বেশি বৈচিত্র্য
কখনও কখনও অফিসিয়াল মার্কেটে নির্দিষ্ট কালার বা স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায় না। কিন্তু আন অফিসিয়াল বাজারে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন মডেল, কালার ও স্টোরেজ অপশন সহজেই পাওয়া যায়।
আন অফিসিয়াল আইফোন কেনার অসুবিধা
তবে আন অফিসিয়াল আইফোনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধা রয়েছে, যা অনেক সময় ব্যবহারকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
১. কোনো ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সাপোর্ট নেই
আন অফিসিয়াল আইফোন কিনলে বাংলাদেশে কোনো ওয়ারেন্টি পাওয়া যায় না। ডিভাইসে সমস্যা হলে Apple-এর অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টারগুলো এটি রিপেয়ার বা রিপ্লেস করতে রাজি হয় না। যেকোনো মেরামত বা পার্টস পরিবর্তনের খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়।
২. নেটওয়ার্ক সমস্যার ঝুঁকি
আন অফিসিয়াল আইফোন অনেক সময় নির্দিষ্ট দেশের লকড ভার্সন হয় (যেমন: United States বা Japan থেকে আনা ক্যারিয়ার-লকড ফোন)। এই ধরনের ফোনে স্থানীয় সিম কার্ড ব্যবহার করতে সমস্যা হতে পারে, কল ড্রপ, নেটওয়ার্ক না পাওয়া, বা ডুয়াল সিম ফিচার কাজ না করার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. আন অফিসিয়াল আইফোন কাস্টমস জটিলতা ও আইনি ঝুঁকি
আন অফিসিয়াল ফোন কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ছাড়াই আনা হয় বলে এটি অবৈধ আমদানির মধ্যে পড়ে। বিমানবন্দরে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকিংয়ে ধরা পড়লে ফোন বাজেয়াপ্ত হতে পারে এবং জরিমানাও গুনতে হতে পারে।
৪. iCloud লক বা রিফার্বিশড হওয়ার সম্ভাবনা
অনেক সময় আন অফিসিয়াল আইফোনের মধ্যে iCloud লক থাকা বা রিফার্বিশড/ব্যবহৃত ফোনকে নতুন বলে বিক্রি করা হয়। বাহ্যিকভাবে একদম নতুন দেখালেও ভিতরে পুরোনো পার্টস থাকতে পারে।
৫. রিসেল ভ্যালু কম
আন অফিসিয়াল আইফোনের দ্বিতীয় হাতের বাজারে দাম কমে যায়। ক্রেতারা ঝুঁকি এড়াতে অফিসিয়াল ফোন কিনতে পছন্দ করেন, তাই ভবিষ্যতে বিক্রি করতে গেলে ভালো দাম পাওয়া যায় না।
সিদ্ধান্ত: কোনটা আপনার জন্য ভালো?
আন অফিসিয়াল আইফোন যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করতে চান, ফোনের নিরাপত্তা ও সাপোর্টকে গুরুত্ব দেন, এবং ভবিষ্যতে ভালো রিসেল ভ্যালু চান — তাহলে অফিসিয়াল আইফোন কেনাই সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, যদি বাজেট সীমিত হয়, তাত্ক্ষণিক নতুন মডেল কিনতে চান এবং ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন, তখন আন অফিসিয়াল আইফোন বিবেচনা করতে পারেন। তবে কেনার আগে অবশ্যই বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে কেনা উচিত এবং ফোনটি ফ্যাক্টরি আনলক, আইক্লাউড মুক্ত এবং সম্পূর্ণ কার্যকর কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
উপসংহার
আন অফিসিয়াল আইফোন কম দামে পাওয়া গেলেও এর ওয়ারেন্টি, সার্ভিস, নেটওয়ার্ক সামঞ্জস্যতা এবং আইনি ঝুঁকি বড় সমস্যা হতে পারে। তাই কেনার আগে ভালোভাবে ভেবে দেখা দরকার — শুধু দাম নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা, সার্ভিস এবং নিশ্চিন্ত ব্যবহার কতোটা দরকার সেটিই মূল বিবেচ্য হওয়া উচিত।
আরও পরুনঃ টেলিটক নাম্বার চেক করার সহজ উপায় – সম্পূর্ণ গাইড