পড়ায় মন বসে না? জেনে নিন ৫টি সহজ কিন্তু অব্যর্থ উপায়
বইটা সামনে খোলা, কিন্তু মন কোথায়? ফেসবুকের নিউজফিড, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, কিংবা কালকের খেলার চিন্তা—হাজারো ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, শুধু বইয়ের পাতায় চোখ থাকছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে, কিন্তু পড়া আর এগোচ্ছে না।
১. ২৫ মিনিটের ম্যাজিক: পমোডোরো টেকনিকের জাদু
একটি টাইমার বা ফোনের স্টপওয়াচে ২৫ মিনিটের জন্য সময় ঠিক করুন। এই ২৫ মিনিট ফোন, মানুষ, বা অন্য সব চিন্তা থেকে দূরে থেকে पूरी মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। সময় শেষ হলে ৫ মিনিটের একটি ছোট্ট বিরতি নিন। এই সময়টায় একটু হাঁটাহাঁটি করুন, পানি খান বা চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। এভাবে ৪ বার (অর্থাৎ ৪টি পমোডোরো সেশন) শেষ করার পর ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের একটি লম্বা বিরতি নিন।
২. পড়ার ‘মুড’ তৈরি করুন: নিজের একটা পড়ার জায়গা বানান
নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করুন: প্রতিদিন পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট টেবিল-চেয়ার ব্যবহার করুন। বিছানায় বসে পড়বেন না, কারণ বিছানা আমাদের মস্তিষ্ককে ঘুমের সংকেত দেয়। টেবিল রাখুন পরিষ্কার: আপনার পড়ার টেবিলে শুধু সেই মুহূর্তের প্রয়োজনীয় বই-খাতা আর কলম রাখুন। একগাদা বই আর খাতার স্তূপ মনোযোগ নষ্ট করে। আলো-বাতাসের ব্যবস্থা: যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আছে, সেখানে বসুন। দিনের বেলা জানালার পাশে বসা সবচেয়ে ভালো। বিরক্তিকর জিনিস দূরে রাখুন: পড়ার সময় আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো আপনার মোবাইল ফোন। ফোনটিকে হয় অন্য ঘরে চার্জে দিয়ে আসুন, অথবা সাইলেন্ট করে চোখের আড়াল করে রাখুন। পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দিন যে, এই সময়টা আপনার পড়ার জন্য নির্ধারিত।
৩. মস্তিষ্ককে দিন সঠিক খাবার: পেটে যা, মাথায় তা
মাছ ও ডিম: রুই, কাতলা, ইলিশ মাছের মতো দেশি মাছে থাকা ওমেগা-৩ এবং ডিমের কোলিন মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী। বাদাম: প্রতিদিন অল্প পরিমাণে চিনাবাদাম, কাজুবাদাম বা আখরোট খাওয়ার অভ্যাস করুন। মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি: দেশি মৌসুমি ফল (যেমন: পেয়ারা, আমলকী, কলা) এবং সবুজ শাক-সবজি আপনার মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। পানি পান করুন: পড়ার মাঝে মাঝে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। শরীর পানিশূন্য বা ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে মনোযোগ কমে যায়।
৪. শরীরটাকে একটু নাড়াচাড়া আর ঘুমকে দিন গুরুত্ব
হালকা ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা যেকোনো ধরনের হালকা ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে, যা মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুম: রাত জেগে পড়ার অভ্যাস লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম অপরিহার্য। ঘুমের মধ্যেই আমাদের মস্তিষ্ক সারাদিনের পড়াগুলো গুছিয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে। তাই ঘুমকে অবহেলা করবেন না।
৫. ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন আর নিজেকে বাহবা দিন
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বানান: "আজ অনেক পড়ব" – এমন লক্ষ্য ঠিক না করে বলুন, "আজ রাত ৯টার মধ্যে এই অধ্যায়ের প্রথম ৫ পৃষ্ঠা পড়ব এবং ২টি অঙ্ক করব।" বাস্তবসম্মত হোন: নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী লক্ষ্য ঠিক করুন যা পূরণ করা সম্ভব। সাফল্য উদযাপন করুন: যখন একটি ছোট লক্ষ্য পূরণ হবে, তখন নিজেকে ছোট একটা ট্রিট দিন। যেমন: এক কাপ চা খাওয়া, পছন্দের একটা গান শোনা বা ৫ মিনিটের জন্য বন্ধুর সাথে কথা বলা। এই ছোট পুরস্কারগুলো আপনাকে পরবর্তী লক্ষ্যের জন্য অনুপ্রেরণা দেবে।