গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কত পয়েন্ট লাগবে
ভর্তি পরীক্ষা মানেই টেনশন, মাথা ঘামানো হিসাব আর হাজারটা প্রশ্ন। "আমি গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবো তো?", "জিপিএ কম হলে কি ভর্তির সুযোগ থাকবে না?", "পাস মার্ক কত?" এসব প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়, তাই না?
আজকের এই লেখায় আমরা একদম সহজ ভাষায় বুঝে নেবো—গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় (GST) কীভাবে অংশ নিতে হয়, GPA কত লাগবে, চান্স পেতে কেমন মার্ক দরকার, আর কীভাবে প্রস্তুতি নিলে তুমি সফল হতে পারো।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কী?
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চালু হয় ২০২১ সালে, যখন করোনার কারণে আলাদা আলাদা ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তখন ১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি সাধারণ পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ছাত্রছাত্রীদের সময়, টাকা আর কষ্ট—সবই কমে।
এই পরীক্ষায় তিনটা ইউনিট থাকে:
A ইউনিট: বিজ্ঞান বিভাগের জন্য
B ইউনিট: মানবিক বিভাগের জন্য
C ইউনিট: বাণিজ্য বিভাগের জন্য
একবার পরীক্ষা দিয়ে এই ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটিতে চান্স পাওয়া যায়।
অংশ নিতে হলে কী লাগে? (যোগ্যতা)
১. GPA যোগ্যতা
ইউনিট | SSC + HSC মিলিয়ে মোট GPA | প্রতিটি পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA |
---|---|---|
A (বিজ্ঞান) | ৮.০০ | ৩.৫০ |
B (মানবিক) | ৬.০০ | ৩.০০ |
C (বাণিজ্য) | ৬.৫০ | ৩.০০ |
মানে, যদি তোমার SSC তে ৪.২০ আর HSC তে ৩.৮০ হয়, তাহলে গড় GPA হয়: (SSC ৪.২০ x ৪০%) + (HSC ৩.৮০ x ৬০%) = ৩.৯৬ → তুমি যোগ্য।
২. কোন বছর পাশ করতে হবে?
SSC: ২০২১ বা ২০২২
HSC: ২০২৩ বা ২০২৪
যদি তুমি ২০২৪ সালে HSC দাও, তাহলে তুমি ২০২৫ সালের গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারো।
৩. কয়বার পরীক্ষায় অংশ নেয়া যায়?
সর্বোচ্চ দুইবার। যারা এর আগেও একবার অংশ নিয়েছে, তারাও ২০২৫-এ অংশ নিতে পারবে।
প্রশ্নপত্র কেমন হয়?
A ইউনিট (বিজ্ঞান):
পদার্থ: ২০
রসায়ন: ২০
ICT: ২০
বাংলা: ১০
ইংরেজি: ১০
বায়োলজি/গণিত: ২০
B ইউনিট (মানবিক):
বাংলা: ৪০
ইংরেজি: ৩৫
ICT: ২৫
C ইউনিট (বাণিজ্য):
হিসাববিজ্ঞান: ২৫
ব্যবস্থাপনা: ২৫
ICT: ২৫
বাংলা ও ইংরেজি: ২৫
⏱ মোট সময়: ৬০ মিনিট ❌ নেগেটিভ মার্কিং: প্রতি ভুল উত্তরে ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে
চান্স পেতে কত নম্বর লাগবে?
✅ পাস মার্ক:
প্রতিটি ইউনিটেই ৩০ নম্বর পেতে পাস ধরা হয়। তবে পাস করলেই চান্স হবে না, আসল খেলাটা এখানে!
📉 কাট-মার্ক (প্রবেশসীমা):
বছর | ইউনিট | কাট-মার্ক (প্রবেশসীমা) |
২০২৪ | A | ৪৪-৫২ |
২০২৩ | B | ৩০-৩৫ |
২০২৫ (ধারণা) | A | ৩৬-৪৮ |
বিজ্ঞান ইউনিটে যদি ৫৫+ পেতে পারো, তাহলে ভালো ভার্সিটি আর ভালো সাবজেক্টের সুযোগ থাকবে।
মেরিট লিস্টে জায়গা পেতে কত নম্বর দরকার?
ইউনিট | নিরাপদ স্কোর (সেফ জোন) |
A | ৫৫-৮০ |
B | ৪৫-৭৫ |
C | ৫০-৭০ |
মনে রাখো:
৬০-এর উপরে পেলে CSE, Genetic Engineering-এর মতো সাবজেক্টে চান্স পাওয়ার ভালো সুযোগ থাকে।
৪৫-৫০ পেলেও সাধারণ বিজ্ঞান, ব্যবসায় বা মানবিক বিষয়ের ভালো ইউনিভার্সিটি পাওয়া সম্ভব।
আসন সংখ্যা কত?
ইউনিট | আসন সংখ্যা |
বিজ্ঞান | ৬,৬৩৬ |
মানবিক | ৪,৩৬২ |
বাণিজ্য | ২,৩৮২ |
মোট আসন: প্রায় ১৩,৩৮০
প্রতি আসনের জন্য লড়াই করছে প্রায় ১৭ জন। তাই প্রস্তুতি হওয়া চাই নিশ্ছিদ্র!
কিভাবে প্রস্তুতি নেবে?
১. প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করো: কোন ইউনিট, কোন বিষয় তোমার লক্ষ্য? ২. MCQ প্র্যাকটিস করো: সময় ধরে ৬০ মিনিটে ১০০টি প্রশ্নের অভ্যাস করো 3. মডেল টেস্ট দাও: বন্ধুদের সঙ্গে সময় বেঁধে পরীক্ষা নাও 4. নেগেটিভ মার্কিং মাথায় রেখে চেষ্টা করো: নিশ্চিত না হলে অন্ধভাবে উত্তর দিও না 5. আগের বছরের প্রশ্ন দেখো: কোন ধরণের প্রশ্ন আসে, তা জানতে পারবে
আবেদন করার ধাপ
- প্রাথমিক আবেদন: মার্চে শুরু হয়, অনলাইনে করতে হয়
- ফি প্রদান: বিকাশ/নগদে টাকা জমা দিতে হয় (৳১৫০০)
- প্রবেশপত্র ডাউনলোড: নির্ধারিত সময়ে
- পরীক্ষা: এপ্রিল-মে মাসে হয়
- মেরিট লিস্ট → বিষয় চয়েস → ভর্তি → মাইগ্রেশন
উপসংহার
গুচ্ছ পরীক্ষা আসলে তোমার জীবনের বড় একটা মোড়। যারা GPA-তে ভালো, তারা অবশ্যই চেষ্টা করবে, আর যাদের GPA একটু কম, তারা যেন হতাশ না হয়ে পরীক্ষায় ভালো করে সেটা পুষিয়ে নিতে পারে—এই হোক লক্ষ্য।
তুমি যদি এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করো, নিয়ম করে পড়ো, পুরনো প্রশ্ন চর্চা করো—তাহলে কেউ তোমাকে আটকাতে পারবে না। আজ থেকেই নিজের জন্য একটা স্টাডি প্ল্যান বানাও, আর পরীক্ষার দিন পর্যন্ত লক্ষ্য রেখো—৫৫+ মার্ক (A ইউনিটের জন্য)।
ভালো প্রস্তুতি মানেই ভালো ফলাফল। মনে রেখো, তুমি পারবে! ✅
শুভ কামনা রইল—গুচ্ছ ভর্তির যুদ্ধে তোমার জয় হোক!